রাক্ষুসে সাকার ফিশ কিভাবে দেশীয় মাছ ধ্বংস করছে ?

একুরিয়ামে পালন করা মাছের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি মাছ হলো সাকার ফিস. নিতান্তই শখের বসে পালন করা এই মাছ বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের বাস্তু সংস্থানের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে. সাকার মাছ বাংলাদেশের পুকুর, নদ নদী সহ সকল ধরনের প্রাকৃতিক জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়েছে. এরা দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছ এবং বড় মাছের পোনা খেয়ে ফেলে. তাই সাকার মাছ বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদের জন্য এক বিশাল হুমকি.

Mar 4, 2023 - 00:49
Mar 4, 2023 - 00:51
 0  7
রাক্ষুসে সাকার ফিশ কিভাবে দেশীয় মাছ ধ্বংস করছে ?
রাক্ষুসে সাকার ফিশ কিভাবে দেশীয় মাছ ধ্বংস করছে ?
একুরিয়ামে পালন করা মাছের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি মাছ হলো সাকার ফিস. নিতান্তই শখের বসে পালন করা এই মাছ বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের বাস্তু সংস্থানের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে. সাকার মাছ বাংলাদেশের পুকুর, নদ নদী সহ সকল ধরনের প্রাকৃতিক জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়েছে. এরা দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছ এবং বড় মাছের পোনা খেয়ে ফেলে. তাই শাখার মাছ বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদের জন্য এক বিশাল হুমকি.

সে কারণে এই মাছ নিষিদ্ধ করা হয়েছে.

রাক্ষসের শাখা ফিশ কিভাবে দেশীয় মাছের ক্ষতি সাধন করছে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হবে. কি কেন কিভাবের এই পর্বে.

সাকার ফিসের আসল নাম সাকার মাউথ ক্যাটফিশ. এর বৈজ্ঞানিক নাম হিপোস্ট্রমাস, প্লেকাসটমাস. এটি প্ল্যাকো নামেও পরিচিত.

বুড়িগঙ্গার আশেপাশের অনেকে একে চকবগে মাছও বলে.

অ্যাকুরিয়ামের কাঁচের সঙ্গে লেগে থাকা শ্যাওলা ও ময়লা পরিষ্কার করার জন্য আশির দশকে বিদেশ থেকে এই মাছ আনা হয়েছিল. এই মাছ কোস্টারিকা পানামা এবং দক্ষিণ আমেরিকায় ব্যাপকভাবে বিস্তৃত. তবে কয়েক বছর ধরে এটি ভারত, চীন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের জলাশয়ে দেখা যাচ্ছে.

সাকার মাছের পিঠের উপরে বড় ও ধারালো পাখনা আছে. দুই পাশেও রয়েছে একই রকমের দুটি পাখনা. এর মাথার নিচের দিকে থাকা দাঁতও বেশ ধারালো. সাধারণত জলাশয়ের আগাছা, জলজ পোকামাকড় ও ছোট মাছ এদের প্রধান খাবার. যে সব পানিতে দূষণের কারণে অক্সিজেনের পরিমান প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসে. সেখানে অন্য মাছ বাঁচতে পারে না. তবে এই মাছ অনায়াসে বাঁচে. এমনকি পানি ছাড়াও সাকার ফিস চব্বিশ ঘ পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে.

প্রথম দিকে কোনোভাবে অ্যাকোরিয়াম থেকে উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছটি ছড়িয়ে পড়েছিল. তারপর থেকে খুব দ্রুত সারা দেশে সাকার মাছ ছড়িয়ে পড়েছে.

বর্তমানে দেশের অধিকাংশ জেলার নদ নদীতে এই মাছ পাওয়া যাচ্ছে. এমনকি বুড়িগঙ্গার মতো দূষিত পানিতেও মাছ ব্যাপক হারে বংশবৃদ্ধি করছে. সেই সাথে মানুষ যেহেতু এই মাছ খায় না, তাই এর সংখ্যাও কমছে না. আগে বর্ষাকালে বুড়িগঙ্গা নদীতে বেশ কিছু দেশীয় মাছ পাওয়া যেত. কিন্তু এক বুরি গঙ্গায় জাল ফেললেই ঝাঁকে ঝাঁকে শুধু সাকার fish পাওয়া যাচ্ছে. এমনকি এক জালে দুই থেকে চার মন পর্যন্ত শাকার মাছ উঠে আসছে. স্থানীয় অনেকেই বুড়িগঙ্গায় গোসল করতেন. তারাও এখন সাকার ফিসার ভয়ে পানিতে নামেন না. কারণ অনেকের গায়ে সাকার মাছের ধারালো পাখনার আঘাত লেগে শরীরে পচন ধরার খবর পাওয়া গেছে.

মৎস্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে সাকার ফিস দেশীয় প্রজাতির মাছের ডিম ও রেনু খেয়ে মাছের বংশ বিস্তারে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে. এই মাছ যেকোনো পরিবেশে বাঁচতে পারে. এবং দ্রুত বংশ বৃদ্ধির কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছের সঙ্গে খাদ্য ও বাসস্থান নিয়ে প্রতিযোগিতা করে. একদিকে দেশীয় ছোট মাছ সাকার ফিসের খাদ্যে পরিণত হয়. অন্যদিকে বড় মাছগুলো সাকার ফিসের কারণে প্রয়োজনীয় খাবার সংগ্রহ করতে পারে না. সে কারণে দেশীয় ছোট এবং বড় সকল প্রজাতির সাকার ফিসের কারণে হুমকির মুখে রয়েছে.

বিশেষজ্ঞরা বলছেন দেশের উন্মুক্ত জলাশয়ে সাকার মাছের বিস্তার বন্ধ করা না গেলে সকল ধরনের দেশীয় মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাবে.

বিশ্বের অনেক দেশে সাকার মাছ খাওয়া হলেও বাংলাদেশে এই মাছ খাওয়ার তেমন প্রচলন নেই. তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের অনেকেই সাকার মাছ খাওয়া শুরু করেছেন.

ইউটিউবে সাকার মাছ রান্নার বেশ কিছু রেসিপিও রয়েছে. এই মাছ খাওয়ার প্রধান অন্তরায় হল সাকার ফিসের মাথা. পাথরের মতো শক্ত. এবং শরীরের আবরণও সহজে কাটা যায় না. বিদঘুটে চেহারা এবং শক্তকরণের কারণে অনেকে একে শয়তান মাছও বলে. সাকার ফিসের মাথা সহ শরীর অন্যান্য অংশ ফেলে দিলে মাছের মাত্র তিরিশ শতাংশ খাওয়ার উপযোগী থাকে. তবে বাংলাদেশের শাখার মাছ খাওয়ার বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন. কারণ বেশ কয়েক জায়গার নমুনা পর্যবেক্ষণ করে এই মাছের শরীরে ক্ষতিকর ভারী পদার্থের উপস্থিতি পাওয়া গেছে. তাই পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়া এই মাছ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য দীর্ঘ মেয়াদি ঝুঁকি বয়ে আনতে পারে.

বিগত বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় প্রাথমিকভাবে সাকার ফিস নিষিদ্ধ করেছিল. চলতি বছরের জানুয়ারিতে মহামান্য রাষ্ট্রপতির নির্দেশে চূড়ান্তভাবে সাকার মাছ নিষিদ্ধ করা হয়. মাছটি আমদানি প্রজনন, পরিবহন, বিক্রি aquarium এ পালন, সংরক্ষণ এবং প্রদর্শন করা সম্পূর্ণ নিষেধ. সাকার মাছ পেলেই তার সাথে সাথে মেরে ফেলতে হবে. অনেকে জলাশয় থেকে সাকার মাছ ধরলে তা আবার পুনরায় পানিতে ছেড়ে দেয়.

এটি মোটেও ঠিক নয়. একে সরাসরি মাটি চাপা দিয়ে মেরে ফেলতে হবে. চাষের পুকুরে সাকার মাছ থাকলে পুকুরের পানি শুকিয়ে এই মাছ মেরে ফেলতে হবে. শাকার মাছের প্রতি এই মুহূর্তে কঠোর না হলে এটি আমাদের দেশীয় সকল মাছ সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করে ফেলবে.

আপনার প্রতিক্রিয়া কি?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

mdjblog "Mdjblog is a leading education platform that provides valuable information and insights about technology and life skills. Designed for younger generations, mdjblog is your one-stop source for all things tech-related and practical learning. Our team of experts delivers clear, concise, and engaging content to help you expand your knowledge and reach your full potential. Whether you're interested in learning about the latest advancements in technology or want to improve your skills, mdjblog has you covered. Join the mdjblog community today and stay ahead of the curve."